মা আনন্দময়ী
প্রণবেশ চক্রবর্তী
সেই দিনটা ছিল মধ্য বৈশাখ মাসের শেষ রাত্রি। ১৮৯৬ সালের ৩০ এপ্রিল। অনন্ত প্রকৃতির অপার লীলাভূমি ত্রিপুরা জেলার খেওড়া গ্রামের আকাশ সেদিন সেই কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে সন্ধ্যা থেকেই ঘোর মেঘাচ্ছন্ন। রাত যতই বাড়তে থাকে মেঘও ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে। তারপর একসময় আকাশ জুড়ে দেখা দিল আলোর ছ’টা। সেই আলোর বন্যায় ভেসে গেল খেওড়া গ্রাম। জ্যোতির্ময় হয়ে উঠল দরিদ্র ব্রাহ্মণ, বিপিনবিহারী ভট্টাচার্যের কুটির। আর সেই স্বর্গীয় আলোতেই বিপিনবিহারীর পত্নী মোক্ষদা সুন্দরীর কোল আলো করে যে শিশুকন্যা আবির্ভূতা হলেন—সেই শিশু কন্যা কিন্তু অন্যান্য নবজাতকের মতো জন্মের পর কাঁদেনি—বরং এক বিস্ময়কর ব্যতিক্রম ঘটিয়ে মহানন্দে হেসেছিল।
জন্মসিদ্ধা নির্মলার অলৌকিক লীলার শুরু সেই জন্মলগ্ন থেকেই—পরবর্তীকালে যিনি মা আনন্দময়ী রূপে তাঁর অপার যোগবিভূতির মহিমায় বিশ্বজনকে মোহিত করেছেন।
একদিন শিশু নির্মলা তাঁর বাবা বিপিনবিহারীকে প্রশ্ন করেন, ‘আচ্ছা বাবা, হরি নাম করলে কী হয় ?’ শিশুকন্যার মুখে এই প্রশ্ন শুনে পরম ভক্ত বিপিনবিহারী জবাব দেন, ‘হরির নাম গান করলে যে হরিকে দেখা যায় মা।’ এবার মেয়ের দ্বিতীয় প্রশ্ন, ‘হরি কি খুব বড় নাকি বাবা ?’ সরল শিশুর মুখে এই প্রশ্ন শুনে আনন্দ পান বিপিনবিহারী, বলেন, ‘হ্যাঁ গো, হরি যে খুব বড়।’ কিন্তু কত বড় ? পাঁচ বছরের শিশুকন্যা ভেবেই পায় না। শেষ পর্যন্ত সামনের মাঠটা দেখিয়ে পিতাকে প্রশ্ন করেন, ‘এই মাঠের মতো বড় ?’